খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  চট্টগ্রামে জোড়া খুনের ঘটনায় ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বেদনায় কাটছে জুলাই আন্দোলনে শহীদ আব্দুল্লাহর পরিবারের ঈদ

বেনাপোল প্রতিনিধি

ঢাকায় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত শহীদ আব্দুল্লাহর পরিবারের সদস্যদের মনে ঈদের আনন্দ নেই। শোকে আর স্মৃতিতে ডুবে আছেন পরিবারের সদস্যরা। ঈদে আনন্দের বদলে আব্দুল্লাহহীন ঈদের আনন্দ যেন শূন্য হয়ে গেছে তাদের জীবন। এমন শূণ্যতা যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল পোর্টথানার বড় আঁচড়া গ্রামের সেই ছোট্ট বাড়িতে।

শহীদ আব্দুল্লাহর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ছিল আব্দুল্লাহ। কলেজ ঈদের ছুটি দিলে বাড়িতে ফিরে আসতেন আব্দুল্লাহ। সারাদিন ভাগ্নি-ভাতিজাদের সাথে আনন্দে দিন কাটতো তার। আব্দুল্লাহর বাড়িতে আসার খবর শুনে ছুটে আসতেন তার বন্ধুরা। তাদের সাথে দিনভর খেলাধুলা ও গল্প-গুজবে সময় কেটে যেত আব্দুল্লাহর। প্রতিবেশী স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কেউ বাড়িতে আসলে তার লেখাপড়ার খোঁজ খবর নিতেন আব্দুল্লাহ। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সময় দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন নিজের লেখাপড়াও চালিয়ে যেতেন। প্রতি বছরের মত এবারও ঈদ ঘুরে এলেও এবার আব্দুল্লাহর সাথে পরিবারের সদস্যদের ঈদের নামাজ পড়া কিংবা ঈদের দিনে একসাথে খাবার খাওয়া আর হবে না।

আব্দুল্লাহর বড় ভাই জাহাংগীর আলম বলেন, ভাইকে ছাড়া এবারই প্রথম ঈদ করছি। ভাই বাড়িতে আসতো, আনন্দ-উল্লাসে দিন কাটতো। কিন্তু এবারের দিন আমাদের দুঃখ-বেদনার, কান্নার।ছোট ভাই নানা-নানীর কবরের পাশে চিরনিন্দ্রায় শায়িত। ভাইয়ের কবর দেখলেই চোখে পানি চলে আসে। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। প্রতি বছর রমজানে কলেজ ছুটি হলে ভাই বাসায় চলে আসতো। আব্দুল্লাহসহ পরিবারের সকল সদস্য মিলে ইফতার করতাম। আজ সোমবার (৩১) মার্চ সকালে ঈদের নামাজের পর আমি, বাবা, মেজো ভাইসহ আব্দুল্লাহর কবর জিয়ারত করতে গিয়ে কান্না ভেঙ্গে পড়ি। আব্দুল্লাহসহ চব্বিশের অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের যেন আল্লাহ জান্নাত নছিব করেন। যেসব আহত ভাই রয়েছেন তারা যেন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন দেশবাসীর কাছে এই দোয়া কামনা করছি।

শহিদ আব্দুল্লাহর মা মাবিয়া খাতুন বলেন, আব্দুল্লাহ ঈদের সময় গরুর মাংস ও খিচুড়ি খেতে পছন্দ করতো। আমার হাতের রান্না তার অত্যন্ত পছন্দের ছিল। ঈদের সময় আব্দুল্লাহসহ তার ভাই-বোনদের নিয়ে আনন্দে সময় কাটতো। আজ আমার বুকের ধন নেই। একজন মা বোঝে তার সন্তান হারানোর কষ্ট। আমার ছেলেকে আল্লাহ যেন শহীদী মর্যাদা দান করেন।

আব্দুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার বলেন, আব্দুল্লাহর জন্য কবরের পাশে শুধু কাঁদি আর আল্লাহর কাছে দোয়া করি। এখন সবাই আমার খোঁজ-খবর রাখে। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। আরও যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সকলের জন্য দোয়া করবেন। আমার ছেলে জীবন দিয়ে নতুন স্বাধীনতা এনেছে। একজন বাবার জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে।

উল্লেখ্য বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট বংশাল থানার পাশে তাতী বাজার এলাকায় দুপুর দুইটার দিকে পুলিশের গুলিতে আহত হয় আব্দুল্লাহ।প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে ঢাকার সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনমাস ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত বছরের ১৪ নভেম্বর ভোরে মারা যায়। তিনি পুরোনো ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!